
আমার আজও মনে পড়ে সেদিনের কথা।কবির ভাই আমাকে রিং করে জানালেন," ঝিনুক তুমি কি আমার গ্রামের খবরটি শুনেছ?আমার গ্রামের মানুষেরা স্বেচ্ছাশ্রমে পাকা রাস্তা তৈরী করছে?আমি আসতেছি রাস্তার কাজে সামিল হতে। চাইলে তুমিও আসতে পার। গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে খিচুড়ি খাওয়াবো।অতিথি আপ্যায়নে ত্রুটি হবেনা।"
শুনেই মুচকি হাসি দিলাম।এ রকম একটা আজগুবি কথা শুনে সত্যি ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেলাম।স্বল্প সময়ের জীবনে রাস্তার সংস্কারে স্বেচ্ছাশ্রমের বহু নজির দেখেছি,শুনেছি কিন্তু এ রকম পাকা রাস্তা তৈরীর দুঃসাহসীক উদ্যোগ নেওয়া আসলেই অবিশ্বাস্য প্রথম শোনা।যাক আমি রাজি হয়ে গেলাম।গিয়েই তো আমি হতভম্ব।কি ভয়ংকর কাদা,হাটু সমান কাদা মাড়িয়ে তবেই গ্রামে প্রবেশ করা যেতে পারে আমি গাড়ি থেকে নেমে চার কিঃমিঃ এর ও বেশী পথ হাটা শুরু করলাম। ঘন্টা দুয়েক পরে পৌছেছিলাম ঠিকই কিন্তু ভয়ংকর কাদা আমাকে সেদিন অনেক পীড়া দিয়েছিল।গিয়েই জানতে পারলাম এলাকাবাসীর করুন দুঃখ দুর্দশার কথা।তাদের অবরুদ্ধকর মানবেতর জীবনযাপন যেন প্রকৃত ছিটমহলবাসী।একটা রাস্তায় গ্রামবাসীকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে।গ্রামবাসীর আর্তনাদ আর কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ।এলাকার মানুষষের যোগাযোগের এই রাস্তা বর্ষার মৌসুম পার হলেও চলার উপযোগী থাকেনা।গ্রামবাসীর অভিযোগ ১৯৮০ সালের পর থেকে এই রাস্তায় এক ঝুড়ি মাটিও ফেলেনি কোন সরকার,কোন জনপ্রতিনিধি।লজ্জ্বাজনক হলেও সত্য আমাদের মাননীয় এম.পি সাহেবের বাড়ি এখান থেকে মাত্র কয়েক ক্রশ দুরত্বে।তবুও নেক নজর পাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি হতভাগ্যদের।
অথচ আনুমানিক দশ হাজার মানুষের একমাত্র চলাচলের রাস্তা এটি।আর যোগাযোগের বেহাল দশার কারনে এই গ্রামের যে কেউ অসুস্থ রোগী হাসপাতালে পৌছানোর আগেই কবরে পৌছে যায়,কেনাকাটা করার অভাবে না খেয়ে দিন কাটাতে হয়।শুধু তাই নয় এই অবরুদ্ধ এলাকার মানুষের সাথে কেউ আত্মীয়তাও করতে চাইনা।ছেলেমেয়ে বিয়ে দিতে চাইনা।এ রকম লোমহর্ষক কাহিনী শুনে হৃদয়টা ভারাক্রান্ত হলেও মুহূর্তে একটা খবর আমার মনকে উৎফুল্ল তৃপ্তি দিল।আর সেটা হল স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা নির্মান। যুগের পর যুগ অবহেলিত নির্যাতিত নিপীড়িত শোষিত বঞ্চিত অসহায় গ্রামবাসী জনপ্রতিনিধিদের ভোটের প্রতারনা আর হীন মানসিকতা কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ঐক্যবদ্ধ এলাকাবাসী নারী,পুরুষ,বয়ো-বৃদ্ধা,শিশু-কিশোর সকলে কাধে কাধ মিলিয়ে দৃঢ় মনোবল আর কঠোর অধ্যাবসায়ে নিজেদের ঘাম ঝরানো পয়সায় স্বেচ্ছাশ্রমে পাকা রাস্তা নির্মানের দুঃ-সাহসীক কর্মযজ্ঞে ঝাঁপিয়ে পড়ে।বড় সৌভাগ্য আমার, শরীক হলাম এই কর্মযজ্ঞের মহা-উৎসবে।এখানেই শেষ নয় আমার মাথায় ভুত চাপল।শুরু করলাম ফেসবুকে লেখালেখি...সকলের নজরে আসতে শুরু হল..একে একে সবাই গ্রামবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে একাত্মতা ঘোষনা করে উৎসাহ উদ্দীপনা সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়ালেন ।ফেসবুক থেকে অনলাইন পত্রিকা, আঞ্চলিক পত্রিকা,জাতীয় পত্রিকা,টিভি-মিডিয়ার বদৌলতে খবরটি ব্যাপক আড়োলন সৃষ্টি করল দেশব্যাপী।

দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার আধুনিকায়নের নৈপূন্যে অবরুদ্ধ মানুষের দুর্দশার চিত্র দৃষ্টিগোছর হল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,মন্ত্রী,আমলা ও সর্বপরী স্থানীয় এম.পি মহোদয় ও জনপ্রতিনিধির।অবশেষে বাংলাদেশের সফল রাষ্ট্রনায়ক দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার আশির্বাদে এল.জি.ইডি মন্ত্রীর সম্মতিতে স্থানীয় এম.পি মহোদয়ের প্রচেষ্টায় রাস্তাটি এল.জি.ই.ডির মাধ্যমে সি.আর.ডি.পি প্রকল্পের আওতায় পাকা করনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাংলাদেশ সরকার।ডিসেম্বরের মধ্যেই রাস্তার কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ কররেন স্থানীয় এম.পি মহোদয়।স্বাধীন বাংলাদেশের সফল রাষ্ট্রনায়ক দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটালের আশীর্বাদ ফেসবুকের মাধ্যমেও যে দেশ তথা সরকারের সুদৃষ্টি আকর্ষন করা যায় আজ তা প্রমানিত।ডিজিটালের জাদুর ছোয়ায় একটা অন্ধকার অবরুদ্ধ গ্রামকেও যে আলোর পথে আধুনিকায়নের পথে নিয়ে আসা যায় আজ তা পরিস্কার দেশবাসীর কাছে।সর্বপরী সরকার,গনমাধ্যম,ফেসবুকার,ঐক্যবদ্ধ অধ্যবসায়ী গ্রামবাসী সবাইকে আমার হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে জানাই গভীর শ্রদ্ধা,শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।ভাল থাকুন সবাই।
(বিঃ দ্রঃ
পাকা রাস্তার ছবিটি প্রতিকি মাত্র।এ রকম রাস্তা নির্মানে প্রত্যাশী গ্রামবাসী)
0 comments:
Post a Comment