সৈকত সেনগুপ্ত শুভ :কালবৈশাখী ও নজরুল ভাবনা"



 কিছুক্ষণ আগেই হয়ে গেল এই মৌসুমের দ্বিতীয় কালবৈশাখী ঝড়টি।হাওয়ার রথে চড়ে, মেঘের শঙ্খ বাজিয়ে, হাতে বজ্র ধারণ করে ক্ষণকালের জন্য উদিত হয়েছিলেন ঝড়দেবতা।আসার বেলায় ভয়ের উদ্রেক ঘটালেও,যাওয়ার বেলায় অবশ্য মর্ত্যবাসীকে জলবারি মাত্র সিঞ্চন করেই ফিরে গেলেন নিজালয়ে।
বাংলা সাহিত্যে এমন করেই ঝড়ের মত উদিত হয়েছিলেন ঝাকড়া চুলের এক আজন্ম দুখী কবি।নাম তার নজরুল।ডাক নাম দুখু মিয়া।নামের মতই দুখী তিনি আজন্ম একই সাথে বিদ্রোহী ; তার বিদ্রোহ এই সমাজের চলমান ভেদাভেদ,হানাহানি,হিংসা আর সৌন্দর্যের কোমলতার বিরুদ্ধে।যাক সেটা নিয়ে আরেকটা লেখা লেখার ইচ্ছে আছে।আপাতত নজরুলের একটা গজলের কথা মনে পড়ে গেল এই ঝড় দেখে --
"এল এলরে বৈশাখী ঝড়
ঐ বৈশাখী ঝড় এল এল মহীয়ান সুন্দর।
পাংশু মলিন ভীত কাঁপে অম্বর
চরাচর থরথর।।
ধূলি-গৈরিক নিশান দোলে ঈশান-গগন-চুম্বী,
এল ছন্দ বন্ধ-হারা
এল মরু সঞ্চর
বিজয়ী বীরবর।।"
কবি এখানে কালবৈশাখীর রূদ্র রূপটি ফুটিয়ে তুলেছেন তার সুনিপুন ছন্দ ভঙ্গিমায়।মেঘের গুরুগম্ভীর গর্জনে আজ আকাশ বাতাস প্রকম্পিত। বৈশাখী সেই প্রলয়ঝড়ে আজ প্রলয়নাচন উঠেছে ধরায়।কবির চোখে সেই প্রলয়ঝড়ই সুন্দরের নবরূপ।
ধুলো উড়িয়ে সেই ঝড় আসে,উড়িয়ে নিতে চায় যেন চারপাশের সমস্ত সৃষ্টি।ঈশান দিক থেকেই হয় সেই মহাসুন্দরের রাজকীয় আগমন।বীরবেশে সে আসে; জয় করে নিতে চায় আশেপাশের সবকিছু।
কালবৈশাখীকে বর্ননা করেছেন আরো অনেক কবি।কিন্তু এভাবে প্রকৃতির সাথে মিশে গিয়ে বৈশাখের এই ঝোড়োরূপটি ধরতে পেরেছেন বোধহয় একমাত্র নজরুলই।
এজন্যই নজরুল একই সাথে দুঃখের কবি,বিদ্রোহের কবি,সেই সাথে প্রকৃতির কবি।
সবশেষে এই জন্মতিথিতে কবির উদ্দেশ্যে নিবেদন --
শুভ জন্মদিন হে যৌবনের কবি,
শুভ জন্মদিন হে বিদ্রোহের প্রতিচ্ছবি...
আজকের এদিনে তোমারি ভাষায় -
" অঞ্জলি লহ মোর"
Share on Google Plus

About Anonymous

0 comments:

Post a Comment