"সততার মত এতবড় অর্জন আর নাই, কিছুই নাই"



বছর দেরেক আগের কথা, ইউনিভার্সিটি এক্সাম কোচিং আর টিউশনের ব্যস্ততায় অনেক তাড়ায় ছিলাম ..এক ছাত্রীকে তাদের বাসায় পড়ানো শেষ করে খুবই তাড়াহুড়োর মাঝে তিন তলা থেকে নামার সময় দশ টাকা রিকক্সা ভাড়া নেওয়ার জন্য ম্যানিব্যাগটা বের করি....
রিক্সায় করে আরেক্টা টিউশনের বাসায় সামনে আসতেই ভাড়াটা দিয়ে হঠাৎ পেছনের পকেটে হাত লাগিয়ে দেখি ম্যানিব্যাগ নাই .... মনে মনে ভাবছিলাম যে যাক, ইউনিভার্সিটি আইডি কার্ডটা বাসায় রেখে এসেছি .... না হলে হারাইছিলাম ভাগ্যভালো....
ঐদিনই টিউশনের বেতন পেয়ে ছিলাম ৩,৫০০ টাকা আমার ম্যনিব্যাগে আগে ছিলো এক হাজার টাকার একটা নোট আর দুশত টাকার মত ভাংতি .... আমি সিউর ছিলাম ব্যাগটা রাস্তার পাশেই পরেছে তাই পাবার আশা ছেড়ে দিয়ে অপর বাসায় উঠছিলাম,
এমন সময় ছাত্রীর আম্মুর ফোন আসলো, ফোন করেই তোমার কি কিছু হারাইছে? আমি বললাম না মানে! মনে মনে ভাবলাম বাসায় কি করে সম্ভব... ইনিয়ে বিনিয়ে উত্তর দিলাম হ্যা, উনি বললেন কি হুশ করে চলো না! বাসায় আসো....
বাসায় গিয়ে দেখি আমার সামনেই একজন মধ্যে বয়সী লোক, জীর্ণ শীর্ণ কাপড় পড়া, আমার সামনে ম্যানিব্যাগটা টেবিলের উপরে, আলাদা কিছু ভাংতি টাকা সহ রেখে বললেন দেখেন আপনার সব কিছু ঠিক আছে কিনা? নিচ তলায় সিঁড়ির উপরে পরে ছিলো....
লোকটা আর কেউ নয় ঐবাসায় স্বল্প বেতনে কেয়ারটেকারের চাকরি করেন, আলমগীর ভাই, হতে পারে টাকাটা তার এক মাসের বেতনের চেয়ে বেশি, কচকচে নতুন পাঁচশো টাকার নোট গুলো চাইলেই তিনি হজম করে ফেলতে পারতেন.... আমাকে ভাল করে চিনতেনও না, ম্যানিব্যাগে আমার ছবি দেখে, তিন তলার স্যারের সাথে মিল দেখে ছাত্রীর আম্মুকে নিয়ে দেখায় ....
আমি কৃতজ্ঞতার তার দিকে শুধু তাকিয়ে ছিলাম.... আমি তাকে থ্যাংকস কথাটা বলিনি, কেননা সেটা বুঝার ক্ষমতা বোধহয় তার নেই.... তার মাঝে আমি যা দেখেছি সে যে সততার চাইতে অনেক বড় কিছু যার মুল্য কোন কিছুর বিনিময়ে পরিশোধ করা সম্ভব না....
লোকটাকে এখনো মাঝে মাঝে দেখি, দেখলেই ডান হাতটা এমনিতেই উঠে যায় একটা স্যালুট দেই তাকে এটা যেন সহজাত হয়ে গেছে ....
সারা জীবন সৎ মানুষের গল্প শুনেছি কিন্তু দেখিনি, তবে এখন আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারি ঐযে একজন সৎ মানুষ ....
"সততার মত এতবড় অর্জন আর নাই, কিছুই নাই"
Share on Google Plus

About Anonymous

0 comments:

Post a Comment