সেকাল-একাল এবং আধুনিকতার ছোঁয়া।

শিক্ষিত ও ভদ্র সমাজ অনেক আগেই পলায়ন করেছে।গ্রাম এখন তাদের কাছে নিছক উপহাস মাত্র।অনেকটা নর্দমায় জন্ম নেয়া কীঁট এর মত যে কীঁট ডাঙায় এসে নর্দমাকেই ভুলে যায়। তবুও গ্রাম টিকিয়া আছে,টিকিয়া আছে বললে ভুল হবে,টিকিয়ে রাখা হইতেছে। গ্রাম যে মৃত্যুঞ্জয়ী, মৃত্যুঞ্জয়ী গ্রামের সন্তান।মৃত্যুঞ্জয়ী উপাধি কিন্ত আমার,আপনার দেয়া না।কালের পরিক্রমায় এই উপাধি তারা অর্জন করিয়াছে,অর্জন করিয়াছে বলিলে ভুল হবে,যমরাজ শত চেষ্টা করিয়া ও এখানে সুবিধা করিতে পারে নাই। গ্রাম টিকে আছে,টিকে আছে কিছু জীর্ণতা,দারিদ্র্যতা,বৈষম্য আর অবহেলিত দের নিয়ে।একবিংশ শতাব্দীতে এসেও গ্রামে এখন ও জাতভেদ প্রচলিত আছে তবে সেটা ধনের মাপকাঠিতে,ধর্মের মাপকাঠিতে নয়। একজনের বিপদে পাড়াশুদ্ধুর এগিয়ে আসার গল্পটা প্রত্নতাত্ত্বিকের গবেষণার বিষয় হলেও এগিয়ে না আসার গল্পটার মোড়ক কিন্তু সবার সামনেই উন্মোচিত। আর সেই গল্পের মূল ভিলেন কিন্ত অভাব। বলবনা অভাবে তারা তিনবেলা খেতে পারে না,তবে দুপুরে খাওয়ার পর রাতে আদৌ খেতে পারবে কি না তার নিশ্চয়তা কিন্তু আপনি দিতে পারেন না। যারা গ্রাম দেখেন নি তারা বলতেই পারেন মধ্যম আয়ের দৌড়ে দেশ যেখানে এগিয়ে যাচ্ছে সেখানে মানুষ একবেলা খাবার অনিশ্চয়তায় ভুগে তাও কি সম্ভব।না সম্ভব না আমিও আপনার সাথে একমত কি সব গাঁজাখুরি কথা অবশ্যই বিরোধী দলের ষড়যন্ত্র। এমন যারা ভাবেন তাদের জন্য,কৃষিপ্রধান দেশের কৃষিজ উৎপাদনের মূল পূণ্যভূমি প্রতিটি গ্রামের শতকরা সত্তর ভাগ মানুষ কেই চাল,গম,পিয়াজ,রসুন,ডাল,তেল ইত্যাদি বার মাস কিনে খেতে হয় অথচ গ্রামের আশি ভাগ মানুষের জীবিকার মূল উৎস কিন্ত কৃশিকাজ।তার মানে কি আশিভাগ মানুষ বেকার!না বেকার নয় তারা কাজ করে অন্যের জমিতে বলতে গেলে কিছু ভূস্বামীদের জিম্মায় অনেকটা জমিদারি আমলের প্রজাদের মত। অভাব কিভাবে তাদের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে তা কেবল নিবিড় পর্যবেক্ষণ এ দৃষ্টিগোচর হবে।তাদের রঙিন অথচ মলিন পোশাক,হাসিমাখা কিন্ত রোদেপুরা মুখ সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে কখনো ধরা পরে না।তাদের হাড়-মাংস-চামড়া পরস্পর এমনভাবে মিশে গেছে যে তিনদিন না খেয়ে থাকলেও অভুক্ত মুখ-পেট সবার চোখ কে ফাঁকি দিতে পারে। প্রবাদে আছে সুযোগের অভাবে অনেকেই সাধু।তবে এইখানে একটু আপত্তি আছে আমার।আমি অনেক কে দেখিয়াছি যারা জীবিকার সন্ধানে অন্যত্র পাড়ি দিয়াছিল, আবার ফিরিয়া আসিয়াছে সেই জীর্ণ গ্রামে। নেহাৎ যে ব্যর্থ হয়ে তা কিন্ত নয়,বলতে গেলে ডাঙা থেকে আবার নর্দমায় ফিরে এসেছে কেবল মায়ের টানে,নাড়ীর টানে,মাটির টানে। গ্রামের নাম শুনলে যাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে জারিগান, সারিগান,পল্লীগী তি,যাত্রা,নৌকাবাইচ ইত্যাদি তাদের কে বলি এগুলো কেবল এখন বই পুস্তকেই শোভা পায়। আজ থেকে ২০ বছর পর ওরা জায়গা করে নিবে ঠাকুরমার ঝুলির রুপকথার গল্পে।কেননা গ্রামেও এখন পরিবর্তনের ছোয়া লেগেছে তবে পরিবর্তন কি না জানিনা কেননা পরিবর্তনের যতগুলা মানুষ গ্রহণ করতেছে সবকিছুই আধুনিকতা। কতিপয় শিক্ষিত সমাজের ন্যায় আধুনিক তরুণ গ্রাম্য সমাজের কাছেও জীবন মানে আধুনিকতা আর তাদের কাছে আধুনিকতা মানেই মাদকতা,নগ্নতা,অবৈধ চলাফেরা,অপসংস্ক ৃতি, পশ্চিমাদের অনুসরণ করা। তবুও স্যালুট তাদের যারা এত প্রতিকূলতার মাঝে ও স্বপ্ন দেখে নতুন একটা প্রভাতের।

Courtesy: Ripon Biswas
Share on Google Plus

About Anonymous

0 comments:

Post a Comment